করনাযুদ্ধ, পুরনো আইন, বর্তমান করনীয় | Corona war, old law, what to do.

করনাযুদ্ধ, পুরনো আইন, বর্তমান করনীয় | Corona war, old law, what to do.

দীপঙ্কর দাস।


অবিভক্ত মেদিনীপুর সহ সারা বিশ্বে করনা এখন মাথাব্যাথা। সরকারী ভাবে আগে বলা হয়েছিলো, সর্দি-কাশি না হলে মুখোড় পরার দরকার নেই, এখন বলা হচ্ছে রাস্তায় বেরোলে, মুখোড় পরতেই হবে। আরো বলা হচ্ছে জমায়েত একেবারেই নয়, নো জটলা; পরস্পরের মধ্যে তিন ফুটের ব্যাবধান রেখে দাঁড়ান, হাঁটুন, দোকানি ও ক্রেতার মধ্যেও এই ব্যাবধান রেখে কেনা-কাটা করুন।

Mask- Cover of face, to disguise, to protect from injury (Helmet) or infection (by Doctors). শব্দটা বাঙালীর জীভে আটকে যায়, যুক্তাক্ষর ভেঙে নিতে হয় (মাস্ক)। সহজ শব্দ মুখোড়, গরুর মুখাচ্ছাদন, আপত্তি নাকচ, এখন বাঘের ভয়ে গরুর সঙে এক ঘাটে জল খেতে হবে তিন ফুট ব্যাবধান রেখে। খুব যদি আপত্তি থাকে, মুখা বলা যেতে পারে, জলপাইগুড়ির গমীরা গাজনের মুখোস। শব্দটা আদতে মুখোস, মকরের মেলায় আগে বিকোতো। ফুর্তিতে নয়, লজ্জায় নয়, ছদ্মবেশ ধরার জন্যে নয়, করনা এবং পুলিশের ভয়ে, মুখা পরা শুরু হয়েছে। হ্যাঁ, বাঙালী ভয় পেয়েছে, মুখে গামছা জড়িয়ে বেরোচ্ছে, কিন্তু এখোনো শৃঙ্খলা মানতে শেখেনি। জটলা তো চলছেই, ঔদ্ধতেমর জমায়েতও হচ্ছে।

মহামারি নতুন নয়; প্লেগ, কালাজ্বর, কলেরা, ম্যালরিয়া, টাইফাস, টাইফয়েড। ১৮৩০ খৃষ্টাব্দ নাগাদ কোম্পানি সরকার কলেরার ভয়ে মেদিনীপুর শহরের ভিতর দিয়ে খেয়াঘাট পর্যন্ত প্রসারিত নীলাচল যাত্রা পথে তীর্থযাত্রী গমন নিষিদ্ধ করে কেরানিচটি থেকে কাঁসাই সেতু পর্যন্ত পিলগ্রীম রোড নামে একটি রাস্তা তৈরি করে এবং ফেরিঘাট সরিয়ে আনে। ১৮৯৬ সালে বোম্বাই নগরে প্লেগ দেখা দিলে ইংরেজ সরকার রান্ড (Rand) নামে এক বিকৃত মনোরোগীকে প্লেগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনার নিযুক্ত করে, সেই পাষণ্ড জাহাজ থাকে নামা যাত্রীদের উলঙ্গ করে কুঁচকির স্ফীতি পরীক্ষা করতো, স্ত্রীলোকেরও ছাড় ছিলো না। চাপেকার ভ্রাতারা এই সাহেবকে হত্যা করে, ভারতের মাটিতে সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের সেই প্রথম স্ফুরণ। এই ঘটনার জেরে ইংরেজ লাগু করেছিলো Epidemic Diseases Act of 1897. সেই কানুনবিধিতে রাজ্য সরকারকে মহামারি রোধে পর্যাপ্ত ব্যাবস্থা নেবার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনে বিশেষ বিধিও প্রণয়ণ করতে পারবে। ঐবছর উড়িষ্যা সরকার কলেরা রোধে পুরী জেলায় এই কানুন জারি করে এবং বিধিও প্রণয়ণ করে। বিধিতে লোক-জনের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ, রেল ও অন্য যান-বাহনে ভ্রমণকারীর ইনজেকসন নেওয়ার কাগজ চাইতে পারবে, প্রয়োজনে হাসপাতাল-পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে আটক রাখতে পারবে। কানুন অমান্য দণ্ডবিধি আইনের ১৮৮ ধারায় শাস্তিযোগ্য হবে। এই হাসপাতালে-পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের আটক রাখা হল Quarantine যা এখন দৈনিক খবরের কাগজে লাল-কালোতে ছাপা হচ্ছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৭১ ধারায় বিধিভঙ্গ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে Home Quarantine শব্দটা নতুন, করনার অবদান।

ঘটমান সঙ্কটে পুরোনো আইন বোধ হয় ঘেঁটে দেখা হষনি, নির্দেশাদি সম্ভবত Disaster management Rules মোতাবেক দেওয়া হচ্ছে। সমস্ত নির্দেশে আইনের ধারা উল্লেখ করা দস্তুর, খবরের কাগজে তেমন উল্লেখ থাকছে না, এটা অবশ্যই ত্রুটি। পুরানো আইন নজরে থাকলে, অর্থাৎ মহামারির ইতহাস জানা থাকলে অনেক আগেই কোয়ারেনটাইন চালু করা যেত।

বর্তমানে করনীয় কি ঠিক করতে হলে জানা দরকার রোগটা কি ভাবে ছড়ায়। ভাইরাস মাত্রেই কম-বেশি বায়ুবাহিত কিন্তু প্রাণী দেহে আশ্রয় না পেলে বেশিক্ষণ বাঁচে না। করনা বা কোভিড-১৯ ভাইরাসের এই দিকটা এখনো ভাল করে জানা যায়নি। সম্প্রতি চীনের গবেষকেরা বলেছেন, করনা ভাইরাস বাতাসে ১৩ ফুট ভেসে যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে তিন ফুট দূরত্ব কোনো কাজে আসবে না আর ১৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা কার্যত অসম্ভব, রাস্তায় বেরোনো পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে, যা আরো অসম্ভব; বর্তমানে মধ্যপন্থা হিসেবে, এলাকা বেছে নিয়ে এই কাজ শুরু হয়েছে, বাছাই নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তুলছে বিপন্ন মানুষ এবং অভিসন্ধী মানুষ। বিপন্ন মানুষ ক্ষুধায় পীড়িত, তাই পশ্ন তুলছে; অভিসন্ধী মানুষ ধর্মীয় জিগির তুলছে, আছে রাজনৈতিক টানা পোডে়ন, আর আছে দায়িত্বজ্ঞান হীন অচরণ। এই পরিস্থিতিতে করনীয় স্থির করা ও কর্তব্য করা কঠিন।

পাশাপাশি চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের লড়াইটাও কঠিন। টিকা তৈরি, সুস্থ্য হয়ে ওঠা আক্রান্তের রক্ত থেকে এ্যান্টিবডি সংগ্রহ, এ্যান্টিবায়োটিকের খোঁজ। সেই সঙে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর নিরাপত্তার প্রচেষ্টা।


অর্থনীতিবিদদের নানা মতামত আসছে, আধুনিক বিশ্বে সব সংকটের মূলে আছে অর্থনীতির জট, কাজেই এ চর্চা হবে।

মূল অস্ত্র সামগ্রীক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটানো, সবদিক খতিয়ে দেখা, সমষ্টিগত স্বার্থে বিচার করা।

মহামারি অনেকবার দেখা দিয়েছে, লক্ষ-লক্ষ মানুষ মারা গেছে কিন্তু সমষ্টি মানুষ হার মানেনি। এই মারি হয়তো আমাদের অনেকের জীবন কেডে় নেবে, যারা টিকে যাবে, আমাদের কচকচি তাদের কাজে লাগবে,

মাভৈ।


midnapore.in

(Published on 16.06.2020)